মধ্যপ্রাচ্য থেকে কমছে রেমিট্যান্স

31

images economic 7_73381দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স অর্জনের উৎস মধ্যপ্রাচ্য। আর সেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে গত তিন মাসে ধারাবাহিক হারে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স-প্রবাহ। তবে বেশি কমছে সৌদিআরব থেকে। এর প্রধানতম কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা বলছে, গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক শুধু ফিরেই এসেছে। দু-একটি বাদে আর কোনো দেশে বৈধভাবে শ্রমিক যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, রেমিট্যান্সের প্রবাহে নিম্নগতি অব্যাহত থাকলে আগের বছরের মতো এবারো সামগ্রিকভাবে কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যের সাত দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ৭৯ কোটি ডলার। ওই মাসে মোট এসেছে ১২৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবেও কমে গেছে। যেমন ওই মাসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগের মাসের চেয়ে কমে হয়েছে প্রায় ৭৪ কোটি ডলার। এ সুবাদে সামগ্রিকভাবে কমে নেমেছে ১২৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলারে। আবার একই হারে গত ফেব্রুয়ারি মাসেও রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে গেছে। যেমন গত ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে নেমেছে ৭০ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে কমেছে ১১৯ কোটি ডলারে। অর্থাৎ গত ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ডিসেম্বরের চেয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। একই সাথে ফেব্রুয়ারিতে জানুয়ারির চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশ থেকে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তা সামগ্রিক হারে প্রায় ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ তিন ভাগের দুই ভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। আর মধ্যেপ্রাচ্যের সাত দেশের মধ্যে ৩৭ শতাংশ আসে সৌদিআরব থেকে। এই দেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি কমছে রেমিট্যান্স। সৌদিআরব থেকে তিন মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

তবে গত ডিসেম্বরে এসেছিল ২৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে ২৭ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৬ কোটি ডলার এসেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে মূলত তিনটি কারণে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এর প্রধানতম কারণ হলো- গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক শুধু ফিরেই এসেছে। কিন্তু দু-একটি বাদে আর কোনো দেশে বৈধভাবে শ্রমিক যায়নি। ফিরে আসার চেয়ে শ্রমিক না যাওয়ায় রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে যাচ্ছে।

গত তিন বছরের পরিসংখ্যান টেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানান, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের সাত দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯১৬ কোটি ডলার, এর পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে নেমেছে ৮৪০ কোটি ডলারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এসেছে ৫৮৭ কোটি ডলার। যে হারে কমছে এটা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে তা ৮০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যাবে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একটি ব্যাংকের এমডি জানান, যেটুকু আসছে সেটুকু মূলত যারা এখনো কাজ করছে তাদের বেতন বৃদ্ধির কারণে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ খুবই পরিশ্রমী। বিদেশে কারো প্রথমে সমস্যা হলেও পরে চেনাজানা হলে বাড়তি কাজের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করে থাকেন। এ কারণে যে হারে শ্রমিক ফিরে এসেছে ওই হারে কমেনি।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে শ্রমিক ফিরে আসার ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ ধারা না কমলে বা মধ্যপ্রাচ্যে সমহারে শ্রমিক পাঠাতে না পারলে যে হারে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, তা অব্যাহত থাকবে। আর মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেশি হারে শ্রমিক ফিরে এলে সামগ্রিকভাবেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যেই গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে, যা গত দেড় দশকের মধ্যে প্রথম।

তিনি আরো জানান, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ অশান্ত থাকার কারণে নতুন করে আর শ্রমিক ফিরে যেতে পারেনি। যেমন লিবিয়া, ইরাকে আগে যে হারে রেমিট্যান্স আসত ওই হারে আর রেমিট্যান্স আসছে না। তৃতীয়ত, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট। দেশের এ পরিস্থিতিতে অনেকেই অপেক্ষা করছেন। সব মিলে বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্নগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

ব্যাংকাররা জানান, বর্তমানে দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রারও তেমন চাহিদা নেই। তবে সামনে বিনিয়োগ পরিবেশ ফিরে এলে তখন বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে যাবে। আর যে হারে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে চাপে পড়ে যাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।