ওয়াশিংটনের চেয়ে ব্যয়বহুল শহর ঢাকা, দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে

172
ওয়াশিংটনের চাইতেও ব্যয়বহুল শহর ঢাকা

বিদেশী কর্মীদের বসবাসের জন্য বিশ্বের ৪০তম ব্যয়বহুল শহর হয়েছে রাজধানী ঢাকা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির চাইতেও এখানে বসবাসের খরচ বেশি বলে চলতি বছরের ‘মার্সার কস্ট অব লিভিং সার্ভে’ শীর্ষক জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে।

গেল বছর ঢাকা বিশ্বের ২৬তম ব্যয়বহুল নগরীর স্থান অধিকার করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবসম্পদ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মার্সার জরিপ

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবসম্পদ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মার্সার জরিপের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২২ জুন) তাদের র‍্যাংকিং প্রকাশ করে। আবাসন, পরিবহন, খাদ্য এবং বিনোদনসহ পণ্য ও পরিষেবার ২০০টি তুলনামূলক ব্যয়ের ভিত্তিতে এই বার্ষিক জরিপে এবার ২০৯টি শহরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিউইয়র্কে বসবাসের ব্যয়কে মানদণ্ড ধরে এ তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

২০২১ সালে র‍্যাংকিংয়ে আগের বছরের তুলনায় অবস্থান ১৪ ধাপ পেছালেও; বিশ্বের অন্যান্য উন্নত শহরগুলির তুলনায় ঢাকা এখনও প্রবাসী কর্মীদের বসবাসের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যেমন, ঢাকার চাইতে অনেকগুণ উন্নত জীবনযাপনের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও খরচের দিক থেকে কানাডার টরেন্টো রয়েছে ৯৮তম অবস্থানে। স্পেনের মাদ্রিদ রয়েছে ৬৭তম এবং লুক্সেমবার্গ ৬৩তম স্থানে। ওয়াশিংটন ডিসি, ব্যাংকক ও দুবাইয়ের অবস্থান যথাক্রমে; ৫১, ৪৬ ও ৪২তম।

তাছাড়া, জরিপে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের রাজধানীকেই সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে। তারপরের স্থানগুলোয় রয়েছে; মুম্বাই (৭৮), নয়াদিল্লি (১১৭), ইসলামাবাদ (১১৯ ) এবং করাচি (২০১ তম) অবস্থানে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত মার্সারের বার্ষিক জরিপ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- ‘২০২১ কস্ট অব লিভিং সিটি র‍্যাঙ্কিং’। এখানে পৃথিবীর মোট ২০৯টি শহরের তুলনামূলক ২০০ রকমের পণ্য ও পরিষেবা খরচ যেমন; আবাসন, পরিবহন, খাদ্য, গৃহস্থালি সেবা, পোশাক ও বিনোদন ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়।

চলতি বছরের মার্চে এসব খরচের ওপর জরিপ চালনা করা হয়, যার ভিত্তিতে র‍্যাংকিং তালিকা প্রকাশ করেছে মার্সার।

এ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক কর্মীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীর অবস্থান লাভ করেছে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদ। চীনের স্বশাসিত অঞ্চল হংকং নগরীকে পিছনে ফেলেই এ স্থান অধিকার করে মধ্য এশীয় দেশটির রাজধানী।

গত বছর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী শহরটির শীর্ষ-১০ এ থাকাটাই এক কথায় চমক জাগানিয়া। কারণ, তালিকাতে স্থান পাওয়া অন্য শহরগুলো যেমন- হংকং (গত বছরে শীর্ষ এবং এবারের দ্বিতীয় শীর্ষ খরুচে/ব্যয়বহুল শহর), টোকিও (২০২১ এ চতুর্থ স্থান), জুরিখ (২০২১ এর জন্য পাঁচ নম্বরে) এবং সিঙ্গাপুর (তালিকায় সাত নম্বর) মূলত ব্যবসায়িক কেন্দ্র।

তুর্কমেনিস্তানের চলমান আর্থিক সঙ্কট দেশটির খাদ্য ঘাটতি এবং উচ্চ-মুদ্রাস্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; মূলত এজন্যেই মার্সারের জরিপে গত কয়েক বছর ধরে আশখাবাদের জীবনযাত্রার উচ্চ মান উঠে আসছে।

তবে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে বৈরুত! গতবছর তালিকার ৪৫ অবস্থানে থাকা শহরটি এক লাফে এ বছরের তৃতীয় শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে।

কোভিড-১৯ মহামারি, লেবাননের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং গত বছরের আগস্টে বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণ শহরটির জীবনযাত্রার উচ্চমূল্য বৃদ্ধি্র জন্য দায়ী বলে জানায় মার্সার।

অন্যদিকে তালিকায় নিচের দিকে, অর্থাৎ প্রবাসী কর্মীদের জন্য কম ব্যয়বহুল শহরের মধ্যে রয়েছে তিবি‌লিসি, জর্জিয়া (২০৭), লুসাকা, জাম্বিয়া (২০৮) এবং বিশিখ, কিরগিজস্তান (২০৯)।

মহামারিতে  কাজের ধরন পরিবর্তন

মার্সারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ইন্টারন্যাশনাল মোবিলিটি দলের প্রধান ভিন্স কর্ডোভা সিএনএন ট্র্যাভেলকে জানান, মহামারির প্রভাবে বাণিজ্যিক কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে যা এই বছরের র‍্যাঙ্কিংয়েও প্রভাব ফেলেছে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা ঘরে বসে কাজ এবং দেশভেদে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে অনেক সংস্থাই ভিনদেশি শ্রমিকদের স্থানান্তরিত করার পরিবর্তে ‘ইন্টারন্যাশনাল রিমোট হায়ার’র মত বিকল্প উপায় বেছে নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে।

“আন্তর্জাতিকভাবে কাজের ধারার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আগের চাইতে ভিন্ন পণ্য-পরিষেবা এবং ভোক্তা চাহিদাতে পরিবর্তন হচ্ছে”, বলেন কর্ডোভা।

বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর মহামারি থেকে চীনের ‘দ্রুত তবে অসম’ পুনরুদ্ধারের প্রভাবের কথাও কর্ডোভা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “২০২০ সালে প্রবৃদ্ধির মুখ দেখা একমাত্র প্রধান অর্থনীতির দেশ এটিই”।

তবে আগামী বছর মার্কিন ডলারের মুদ্রামানের প্রত্যাবর্তন হলে ভবিষ্যতের তালিকা ভিন্ন হবে বলেই তার বিশ্বাস।

২০২১ সালে জীবনযাত্রার ব্যয়ের ভিত্তিতে খরুচে শহর

  • আশখাবাদ (তুর্কমেনিস্তান)
  • হংকং (চীন)
  • বৈরুত (লেবানন)
  • টোকিও (জাপান)
  • জুরিখ (সুইজারল্যান্ড)
  • সাংহাই (চীন)
  • সিঙ্গাপুর
  • জেনেভা (সুইজারল্যান্ড)
  • বেইজিং (চীন)
  • বার্ন (সুইজারল্যান্ড)