ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের গোপন বিষয়

38

file-5প্রতিদিন শত শত বিমানে করে হাজার হাজার মানুষ ভ্রমণ করছেন। আকাশে বড় একটা সময় কাটিয়ে দেন যাত্রী ও বিমানের ক্রুরা। কত ধরনের মানুষ কত কাজই না করেন বিমানে। প্রতিনিয়ত এদের খেয়াল রেখে চলেছেন ক্রুরা। যাত্রীদের সব কাজই দেখছেন তারা। কিন্তু তারা কি করছেন, তার কি পুরোটাই দেখছেন যাত্রীরা? ইয়াহু ট্রাভেল তুলে এনেছে ক্রুদের অজানা বেশ কয়েকটি কাজের কথা। জানতে পারবেন তারা কিভাবে যাত্রীর দেখভাল করেন, কিভাবে নিজেদের উৎফুল্ল রাখেন, আর কিভাবেই বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

১. যে কারণে যাত্রীদের দ্রুত সিটে বসাতে চান তারা : বিমানের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের বিশেষ সময় অনেকটা সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসারের মতো লাগে। যাত্রীদের দ্রুত সিটে বসাতে তারা রীতিমতো নির্দেশ প্রদান করতে থাকেন। ‘ব্যাগ সঠিক স্থানে রাখুন। দ্রুত সিটে বসুন। সিটবেল্ট বেঁধে নিন। দয়া করে দ্রুত করুন…’ ইত্যাদি। এটি এমনিতেই বলা হয় না। কারণ ব্যাখ্যা করলেন সাবেক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট শন ক্যাথলিন। বললেন, বিমানের দরজা বন্ধ হয়ে তা দৌড় শুরু না করা পর্যন্ত আমরা পারিশ্রমিক পাই না। তাই নিজের পারিশ্রমিকটা নিশ্চিত করতেই এই তাগাদা।
২. যাত্রাপথে ক্রুদের পার্টি : যাত্রাপথে কিছু সময় থাকে যখন ক্রু ও পাইলটদের বিশ্রামের সময় আসে। হালকা নাস্তা বা আলাপচারিতা বা একটু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকার মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকে। তবে পার্টিও হয়ে থাকে বলে জানালেন শন। মাঝে মধ্যেই বোতলের ছিপি খোলা হয়। যদিও ফেডারেল নিয়ম বলছে, প্রথম আট ঘণ্টার মধ্যে কোনো অ্যালকোহল নয়। এই আইন পরিস্থিতি স্থিতিশীল রেখেছে। ফ্লাইট শুরুর আগে ড্রাগ টেস্ট নেওয়া হতে পারে।
৩. খালি বিমানও আকাশে ওড়ে : সম্প্রতি ইয়াহু ট্রাভেলকে এক যাত্রী জানান, তিনি নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে যে বিমান ওঠেন, তা কেবল তাকে নিয়েই উড়াল দেয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রু। তিনি জানান, প্রতি ‘ব্লু মুন’-এ বিমান নিয়ে শুধু ক্রুরা যেকোনো একটি গন্তব্যে রওনা দেওয়া হয়। ব্লু মুন বছরের এমন এক সময় যখন পূর্ণ চাঁদ ওঠে। দুই একজন যাত্রী থাকলেও যখন তারা নেমে যান, তখন ক্রুরা নানা রকম খেলা করেন। যেমন- বিমান রানওয়ে থেকে মাটি ছাড়ার সময় সবাইকে সিটে বসতে হয়। কিন্তু এ সময় করিডোরে একটি ট্রে রেখে তার ওপর স্থির দাঁড়িয়ে থাকাই খেলা।
৪. আপনাকে নিয়ে আলোচনা হতে পারে ক্রুদের মাঝে : শন জানালেন, মাঝে মাঝে কোনো যাত্রীকে নিয়ে বসে বসে আলাপ করেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা। হতে পারে তাকে নিয়ে কৌতুক করা। আবার ‘দেখেছো দারুণ সেক্সি’ ধরনের কথাও চলে। একটা কোড প্রচলিত ছিল ‘হট কফি’। ওই সিটে ‘হট কফি’ রয়েছে, এর অর্থ হলো দারুণ আকর্ষণীয় যাত্রী সেখানে রয়েছেন।
৫. প্রয়োজনে আপনার ওপর মার্শাল আর্ট ঝাড়তে পারেন তারা : অ্যাটেনডেন্টদের ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে আগুন নেভানো, ফার্স্ট-এইড কিটের ব্যবহার, এমনকি গর্ভবতীর ডেলিভারি করারও প্রশিক্ষণ থাকে তাদের। আর বিশেষ পরিস্থিতির জন্যে তাদের দেওয়া হয় আত্মরক্ষার কৌশল। এরা ট্রেনিংকালে একে অপরের সঙ্গে আত্মরক্ষার নানা কৌশল চর্চা করেন। অনিয়ন্ত্রিত যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য এদের রয়েছে।
৬. অভদ্র যাত্রীদের ওপর প্রতিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে : কোনো যাত্রীর ব্যবহারে মেজাজ চড়ে গেলে নিজ উদ্যোগে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে ফেলেন অ্যাটেনডেন্টরা। সাধারণত পানীয়তে থাকে এসব প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা। যেমন- বরফ দেওয়া জুসের মধ্যে দুই টেবিল চামচ সোডা দিয়ে দিলে জিদ করে। এটি তাদের প্রতিশোধমূলক ককটেল।
৭. সুযোগ বুঝে রোমান্স করলেই ধরা : অনেক রোমান্টিক তরুণ-তরুণী ওঠেন বিমানে। এদের অনেকেই যাত্রাপথে একটু রোমান্স করার ইচ্ছাটাকে দমন করতে পারেন না। সবাই ঘুমিয়ে গেলে বা সুযোগ মতো টয়লেটে চলে যান দুজনই। এর ব্যবস্থা রয়েছে। এক টয়লেটে দুজন একসঙ্গে ঢুকতে গেলেই দরজা ‘নো, নো’ সংকেত দেয়। এটি অ্যাটেনডেন্টদের চোখে পড়ে।

৮. টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রে টেবিলের বিষয়ে সাবধান : অনেকেই বিমানের টয়লেট ব্যবহারে সচেতন নন। আরেক অ্যাটেনডেন্ট সিডনি পার্ল বলেন, কমোডের পাশেই একটি ট্রে টেবিল জুড়ে দেওয়া থাকে। অনেকে এটাতে শিশুকে বসিয়ে তার ডাইপার বদলান। তখন তা ময়লা হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ বিষয়টি হলো, এসব কাজ করে আবার তা ট্রে টেবিলটি তুলে দেন আগের স্থানে। এতে করে পরে কেউ এলে এর ময়লা খেয়াল করেন না। অনেকে শিশুর কাজ সারতে সারতে তার খাওয়ার কাজও সারতে চান ট্রে টেবিলে। আবার কমোডে বসে ট্রে টেবিলে মুখ রেখে দিব্যি নাক ডাকতেও দেখেছেন তিনি।
সূত্র : ফক্স নিউজ