স্ত্রীর স্মৃতি ফেরাতে ৮৩ বছরের স্বামীর অভিনব ‘বিয়ে’

267

দুরারোগ্য ব্যাধিতে লোপ পেয়েছে প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতি। মনে নেই কিছুই। আছে শুধু অতীত-ভোলা অস্তিত্ব। তাই স্ত্রী-র স্মৃতি ফেরাতে, ৫৫ বছরের বিবাহবার্ষির্কীতে বিয়ের আসর বসালেন ৮৩ বছরের স্বামী!

পবিত্র নন্দী নামে ওই স্বামী একজন অধ্যাপক। স্ত্রী গীতা নন্দী ছিলেন চিকিৎসক। তারা নিঃসন্তান। দশ বছর আগে পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু সুখের সংসারে হঠাৎ ছন্দপতন। ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করে অশীতিপর গীতা নন্দীর স্মৃতি। ধীরে ধীরে গ্রাস করে ডিমেন্সিয়ার (ভুলে যাওয়া রোগ) অন্ধকার।

চিকিৎসকের পরামর্শে, ৮১ বছর বয়সী স্ত্রীকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যান পবিত্র নন্দী। কিন্তু বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্মভিটে থেকে স্ত্রীকে ঘুরিয়ে আনেন বৃদ্ধ। অনেক কিছু চিনতে পারেন বৃদ্ধা। এরপরই স্ত্রীর স্মৃতি ফেরাতে অভিনব উদ্যোগ স্বামীর।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দমদমের রবীন্দ্রনগরের বাড়িতে রোববার সকাল থেকেই অতিথিদের আনাগোনা। মেনু কার্ড ছাপিয়ে এলাহী খাওয়া-দাওয়া, মালাবদল, বিবাহবার্ষিকীতেই আবার বিয়ে।

হাতের ওপর হাত রাখা সহজ নয়। বাড়ানো হাত ধরতে চাওয়াও সহজ নয়। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই করে চলেছেন আশি পেরোনো পবিত্র নন্দী। এদিনও সর্বক্ষণ স্ত্রী-র কাঁধে হাত স্বামীর। প্রতিদিনের মতো নিজ হাতেই খাইয়ে দিলেন স্ত্রীকে।

সালটা ১৯৬১৷ সদ্য কলেজে পড়ানো শুরু করেছেন পবিত্রচিত্র নন্দী৷ ক্লাসে পড়তে এসেছিলেন সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরোনো গীতা৷ শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্কের মধ্যেই জন্ম নিয়েছিল ভালোবাসার চারাগাছ৷ সম্পর্কের বছর দু’য়েকের মাথায় বিয়ে করতে চাইলে বেঁকে বসে গীতার পরিবার৷ কিন্ত্ত , নাছোড় যুগল৷ শেষমেশ ক্যান্টনমেন্টে নন্দী বাড়িতেই বসে বিয়ের আসর৷

‘ওদের বাড়ি থেকে কেউ আসেনি বিয়েতে৷ তবুও আমরা খুশি ছিলাম৷ একে অন্যকে পাওয়ার আনন্দ বলতে পারো ,’ তিরাশির পবিত্রচিত্রর চোখে মুহূর্তে যেন ভেসে ওঠে সেদিনে ছবি৷

তারপর গঙ্গা দিয়ে পানি গড়িয়েছে অনেক৷ বটানির ছাত্রী গীতা স্বামীর উত্সাহে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ঢোকেন৷ পাশ করে বিআরসিং হাসপাতালে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি শুরু করেন তিনি৷ কেমন ছিল দিনগুলো?

এই পরিবারের ৪৪ বছরের পুরোনো পরিচারিকা পদ্ম বলেন, ‘বৌদির রাগটা একটু বেশি ছিল বটে৷ কিন্ত্ত , দাদা বৌদির ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিল না কখনো৷ একে অন্যকে সোনা আর মনা বলে ডাকত৷ এখনও দাদা বৌদিকে মনা বলেই ডাকে বটে৷ কিন্ত্ত বৌদি ডাকতে পারে না৷’

‘আমাকে না দেখলে এখনও ও অস্থির হয়ে ওঠে৷ সবাইকে ভুলে গিয়েছে শুধু আমি ছাড়া৷ তাই ভাবলাম, যদি বিয়েটা করলে ফের কিছু মনে পড়ে ওর৷ ডাক্তাররাও আশ্বাস দিলেন৷ তাই সবার উত্সাহে বিবাহবাসর আয়োজন করেই ফেললাম,’ হাসিমুখে অতিথি আপ্যায়ন করতে করতে বলেন পবিত্র৷

তবে স্ত্রীকে পুরনো দিনের কথা মনে করানোই নয়৷ নিজেদের স্বপ্নের একটা প্রকল্পকেও গতি দিলেন নন্দী দম্পতি৷ দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা শেখানোর জন্য নিজেদের সর্বস্ব দমদম নন্দিশ্রী আনন্দম চ্যারিটেবল ট্রাস্ট বানিয়ে দান করলেন তারা৷

ট্রাস্টের সম্পাদক উদয়ন সেনগুন্ত বলেন, ‘আপাতত নবম-দশমের দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা শেখানো হবে স্যারের বাড়ির একতলায়৷ সঙ্গে দুঃস্থদের বিনামূল্যে চিকিত্সকের পরামর্শের বন্দোবস্তও করবে ট্রাস্ট৷’


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here