‘সৃজনশীল’ ছিনতাইকারী!

27

তিনি ‘সৃজনশীল’ ছিনতাইকারী। এটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ছিনতাই করার জন্য নিত্য নতুন কৌশলের আশ্রয় নেন। শুধু ছিনতাই করেই ক্ষান্ত হন না, ছিনতাইয়ের শিকার মানুষটিকে খুন পর্যন্ত করেন। ভয়ঙ্কর এ ছিনতাইকারীর নাম প্রিয়া। ৩২ বছরের এ তরুণীকে চলনে-বলনে শান্ত স্বভাবের মনে হলেও আড়ালে ভয়ঙ্কর রূপ তার। রাজধানীতে গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম নারী সদস্য তিনি।

তার ছিনতাইয়ের ধরন আলাদা। টার্গেট করা চালককে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে প্রথমে অচেতন করেন। এরপর ছিনিয়ে নেওয়া গাড়ির চাপায় চালককে হত্যা করেন তার সহযোগীরা। আর এসব কাজে তার দলের সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন। এর আগেও প্রিয়া একাধিকবার হত্যাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধে জড়িয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারেও গেছেন। তবে জামিন পেয়ে আবার জড়িয়েছেন পুরনো পেশায়। শনিবার রাতে মিরপুর এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ ভয়ঙ্কর নারীকে এক সহযোগীসহ গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় কালো রঙের পাজেরো স্পোর্টস জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৮১০৪)। যে গাড়িটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন পরিচালক ব্যবহার করতেন। তার চালকের কাছ থেকে গাড়িটি ছিনিয়ে নেয় প্রিয়ার ‘ছিনতাই’ চক্রের সদস্যরা।

শুধু তাই নয়; সেই চালককেও গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করে লাশটি ফেলে রাখা হয় রাজধানীর তুরাগের দিয়াবাড়ী এলাকায়। গ্রেফতারের পর মোরশেদা আক্তার প্রিয়া ও তার সহযোগী মেহেদী হাসানকে (৩৬) গ্রেফতারের পর তারা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিচালকের গাড়ি ছিনতাই ও চালককে হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ দেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আশিকুর রহমান জানান, গত বছরের ১৫ মে রাতে রাজধানীর হাতিরঝিলে নাটোরের যুবদল নেতা জিয়াউল হক সেন্টু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন মোরশেদা আক্তার প্রিয়া। তার পরিকল্পনায় সাবেক প্রেমিক সেন্টুকেও গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশ প্রিয়াকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালেও তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৬ মার্চ নিজের গ্রুপ নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন পরিচালকের গাড়ি ছিনতাই ও চালককে হত্যা করে প্রিয়া ও তার গ্রুপ।

ডিবি পুলিশ জানায়, গত ১৬ মার্চ মিরপুর এলাকা থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (সমন্বয়) ও এসএমইসিআই প্রকল্পের পরিচালক হাবিবুল ইসলাম দারুস সালাম থানায় অভিযোগ করেন, প্রকল্পের গাড়িচালক টিপু সুলতান পাজেরো স্পোর্টস জিপ নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। এর পরই ডিবি পুলিশের পশ্চিম বিভাগ চালক ও গাড়িটি উদ্ধারে তৎপর হয়। তবে পরের দিন তুরাগের দিয়াবাড়ী এলাকায় চালক টিপু সুলতানের হাত-পা বাঁধা লাশ পাওয়া যায়। শুরুতে অজ্ঞাতপরিচয়ে মরদেহ উদ্ধার হলেও পরে লাশটি টিপু সুলতানের বলে স্বজনরা শনাক্ত করেন। এর পরই ডিবি পুলিশ খুনি চক্র এবং ছিনিয়ে নেওয়া গাড়িটি উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে মিরপুরের গুদারাঘাট এলাকা থেকে মোরশেদা আক্তার প্রিয়া ও মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে পাজেরো স্পোর্টস জিপটি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার দু’জন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় ক্যান্টনমেন্ট থানার শেওড়া এলাকায় মেহেদী হাসানের ভাড়া বাসায় পূর্বপরিচিত টিপু সুলতানকে হত্যা করে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা হয়।

ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রিয়া জানান, সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে টিপু সুলতান গাড়িটি নিয়ে মেহেদীর বাসায় যান। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি নিজে আগেই ওই বাসায় অবস্থান নেন। মেহেদী সেখানে গেলে তাকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে দেন। এরপর তারা টিপু সুলতানের গাড়িতে ঘুরতে বের হন। গাড়ি চালানোর সময় ঘুম ঘুম পরিস্থিতি হলে মেহেদী গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নেন। ওই সময় টিপুকে গাড়ির পেছনের সিটে নিয়ে বসানো হয়। গাড়ির ভেতরই অচেতন টিপুর হাত-পা বাঁধা হয়। পরে সুযোগ বুঝে দিয়াবাড়ী এলাকায় রাস্তায় তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর জিপটি তার মাথার ওপর তুলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।

সূত্র: সমকাল