রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও আমল

2519
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও আমল

রিজিক, প্রাচুর্যতা ,অর্থ ,সম্পদ বাড়াতে চায়না এমন লোক পাওয়া যাওয়া দুষ্কর। আমরা সবাই চাই আয় রোজগার বৃদ্ধি পাক, জীবনে স্বচ্ছলতা আসুক, অন্তত প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ আমার থাকুক। তাই আমরা সদা কর্মমূখর।

আর রিজিক একটি ব্যাপক পরিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত সুস্বাস্থ্য, বুদ্ধিমত্তা, জীবন, সন্তান-সন্ততি, স্বচ্ছলতা এবং সঠিক কল্যাণ, উন্নতি ইত্যাদি।

মহান আল্লাহ সমস্ত রিজিকের উৎস। তিনি রাজ্জাক ও একমাত্র রিজিকদাতা এটাই আমাদের আকিদা। তাই বলে কি আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব? না বরং উপায়-উপকরণের মাধ্যমে আমরা তা অর্জন করবো। চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছুর মাধ্যমে।

কুরআন, হাদীস অনুসন্ধান করে কিছু আমল পাওয়া যায় যেগুলোর ব্যাপারে রিজিক বৃদ্ধির ওয়াদা রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক বৃদ্ধির আমল, রিজিক বৃদ্ধির সুরা, ও রিজিক সম্পর্কে হাদিস জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে রিজিক বৃদ্ধির আমল

১. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর  ওপর ভরসা

যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।’ (সুরা তালাক: ৩)

রসুল সা: এরশাদ করেছেন-
عَنْ عُمَرَ بن الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: “لَوْ أَنَّكُمْ تَوَكَّلْتُمْ عَلَى اللَّهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ، تَغْدُوا خِمَاصاً وَتَرُوْحُ بِطَاناً” رَوَاهُ الإِمَامُ أَحْمَدُ فِي المُسْنَدِ، وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ فِي السُّنَنِ، وَابْنُ حِبَّانَ فِي صَحِيْحِهِ، وَرَوَاهُ الحَاكِمُ فِي مُسْتَدْرَكِهِ وَصَحَّحَهُ، وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيْثٌ حَسَنٌ صَحِيْحٌ

অর্থ: হযরত উমর রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: এরশাদ বলেন, যদি তোমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করার মতো ভরসা করতে তাহলে তিনি তোমাদের রিযিক দিতেন যেভাবে পাখিকে রিযিক দেন, যে সকালে বের হয় ক্ষুধার্ত অবস্থায় আর বিকেলে উদর পূর্তি করে ফিরে আসে।(তিরমিযী,নাসায়ী, ইবনে মাযাহ, মসনদে আহমদ)

তাওয়াক্কুল মানে হচ্ছে- কোনো কিছু হাসিল করার উদ্দেশ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করা। একই সাথে এই বিশ্বাস রাখা যে, মহান আল্লাহ যা আমার জন্য কল্যাণকর তা-ই আমাকে দেবেন। জীবনের কঠিনতম সময়ে এই তাওয়াক্কুল মানুষকে শান্তি দেয়, ধীরস্থির ও সৎ রাখে। মহান আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা স্থাপন করলে অসম্ভব স্থান থেকে রিজিক লাভ করা যায়।

২. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করা

যে ব্যক্তি তাকওয়া অর্জন করবে তথা আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তাকে কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।

আল্লাহতালা এরশাদ করেন-
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا. وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

অর্থ:‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে পরিত্রাণের পথ করে দেবেন এবং এমন উৎস থেকে তাকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করেনি। যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করে দিবেন।’ (সুরা তালাক: ২-৩)

মহান আল্লাহ মুমিন বান্দার সাথে তাকওয়া অর্জনের ভিত্তিতে বিশেষভাবে তাকে সাহায্য করার ও তার বিশেষ উৎস থেকে তাকে রিজিক প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন।
আর মহান আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।

বলাবাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।

৩. রিজিক বৃদ্ধির সূরা ওয়াকিয়াহ

সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করলে দরিদ্রতা গ্রাস করতে পারে না।

حديث عبد الله بن مسعود: مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْوَاقِعَة فِي كُلِّ لَيْلَةٍ لَمْ تُصِبْهُ فَاقَةٌ أَبَدًا ، قَالَ: وَقَدْ أَمَرْتُ بَنَاتِي أَنْ يَقْرَأْنَهَا كُلَّ لَيْلَةٍ “. البيهقي في “شعب الايمان” (۲۴۹۸).

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না। আমি আমার মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সূরা তেলাওয়াত করার আদেশ করেছি। (বায়হাকি:শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

সুরা ওয়াকিয়াহ প্রাচুর্যের সুরা রসুল সা এর এরশাদ

عن ابن عباس رسول الله صلى الله عليه وسلم قال‏‏ ‏”سورة الواقعة سورة الغنى فاقرءوها وعلموها أولادكم ( “الدر المنثور” 14 / 173) نسبه السيوطي)

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন সূরা ওয়াকিয়া প্রাচুর্যের সুরা। সুতরাং তোমরা পাঠ করো এবং তোমাদের সন্তানদের শিক্ষা দাও। (আদ্দুররুল মানজুর ১৪/১৭৩)

আরেকটি হাদিস

أنس بن مالك قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم”علموا نساءكم سورة الواقعة فإنها سورة الغنى”، (أورده السيوطي في “الجامع الكبير”، وفي “الدر المنثور” (6/ 153)

হযরত আনাস ইবনে মালেক বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে সূরা ওয়াকিয়া শিক্ষা দাও কেননা এটি ধনাট্য তার সূরা।আদ্দুররুল মানজুরে ৬/১৫৩)

৪. বাড়িতে কোরআন তেলাওয়াত করা

قال رسول الله صلى الله عليه و آله  : ” إجعلوا لبيوتكم نصيباً من القرآن ، فإن البيت إذا قُرء فيه تيَسَّرَ على أهله ، و كَثُرَ خيره ، و كان سُكانه في زيادة ، و إذا لم يُقرأ فيه القرآن ضُيق على أهله و قَلَّ خيره و كان سُكانه في نُقصان “(السعة و الرزق : 97 ، لأية الله الحجة الشيخ محمد الكرباسي رحمه)

অর্থ রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেন- তোমাদের ঘরে কুরআনের কিছু অংশ অর্থাৎ তেলাওয়াত করো নিশ্চয়ই যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হয় সেই ঘরে সহজতা হয় এবং কল্যাণ বেশি হয় এবং তার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় আর যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় না তোমাদের সংকীর্ণতা দেখা দেয় এবং খরচ কম হয় এবং জনসংখ্যা কম হয়।(আসসায়াতু ওয়ার রিজিক ৯৭)

৫.আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করা

আল্লাহর রাস্তায় দান সদকা করলে আল্লাহ তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেন।

আল্লাহ বলেন-
مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً وَاللّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

‘এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ঋণ দেবে, উত্তম ঋণ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহই সঙ্কুচিত করেন অতঃপর তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তারই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারাহ- ২৪৫)

আল্লাহই রিযিক প্রশস্ত করে দেবেন-
﴿ قُلۡ إِنَّ رَبِّي يَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦ وَيَقۡدِرُ لَهُۥۚ وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ ﴾ [سبا: ٣٩]

‘বলো, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ {সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯}

আপনি যে সকল নেককার মুসলমানেরই রিজিকের প্রাচুর্য দেখতে পাবেন, খুঁজে দেখবেন তাদের সবারই বেশি বেশি দানের অভ্যাস রয়েছে। সাহাবাদের জীবনেও বিষয়টি প্রমাণিত। তাই তাকওয়া এবং তাওয়াক্কুলের সাথে যদি বেশি বেশি দান-সদকা করা হয় তাহলে আপনার রিজিক এমনভাবে বাড়বে যা আপনি কখনো কল্পনাও করেননি।

৭. তাওবা ও ইস্তেগফার : রিজিক বৃদ্ধির আমল

অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,

فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ (نوح: ١٠، ١٢)

‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২)

রিজিক সম্পর্কে হাদিস

হাদীস এসেছে বেশি বেশি ইস্তেগফার করলে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিক দেয়া হবে।

عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قال :قال رسول الله صلي الله عليه وسلم :مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ ، جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ(ابو داود الرقم 1520،ابن كاجة 3819)

হাদীসের ভাবার্থ: যে ব্যক্তি সর্বদা ইস্তেগফার করবে,ইস্তেগফারকে নিজের জন্য আবশ্যক করে নিবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে সব সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার পথ তৈরি করে দিবেন এবং সব চিন্তা থেকে মুক্ত করে দিবেন, এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১)

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عن عبد الله ابن عباس قال رسول الله صلى الله عليه و سلم مَنْ أَكْثَرَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَمِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ (‘البيهقي 636،)

অর্থ:আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (বায়হাকী : ৬৩৬; মুস্ততদরাকে হাকেম ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।)

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ১ শতবার তওবা করতেন। আমরাও যদি বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করি তাহলে মহান আলাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইনশাআল্লাহ আমাদের রিজিক বেড়ে যাবে বহুগুণ।

৮. আল্লাহর শোকরগুজার হওয়া, অকৃতজ্ঞ না হওয়া

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
‘যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সুরা ইব্রাহীম-৭)

কৃতজ্ঞতা রিজিককে বাড়িয়ে দেয় এবং অকৃতজ্ঞতা রিজিককে ধ্বংস করে। আপনার ওপর অনুগ্রহগুলো ভালভাবে চিন্তা করুন এবং প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এর শুকরিয়া আদায় করুন। ইনশাআল্লাহ রিজিক বাড়বেই।

৯. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَعْقُوبَ الْكِرْمَانِيُّ، حَدَّثَنَا حَسَّانُ، حَدَّثَنَا يُونُسُ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ رِزْقُهُ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ ‏”‏‏.‏البخاري۵۹۸۵، المسلم۴۶۴۹

যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯)

১০. দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা

حديث مصعب بن سعد بن أبي وقاص -رضي الله تعالى عنهما- قال: رأى سعد أن له فضلاً على من دونه، فقال النبي ﷺ: هل تنصرون وترزقون إلا بضعفائكم؟
أخرجه البخاري، كتاب الجهاد والسير، باب من استعان بالضعفاء والصالحين في الحرب، برقم (2896).

মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ (বুখারি : ২৮৯৬)

১১. রাসুল সা. -এর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়া

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে।

قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّى أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِى فَقَالَ « مَا شِئْتَ ». قَالَ قُلْتُ الرُّبُعَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ النِّصْفَ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قَالَ قُلْتُ فَالثُّلُثَيْنِ. قَالَ « مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ ». قُلْتُ أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِى كُلَّهَا. قَالَ « إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ ». ترمذي 2645قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.

তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও।

কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে।

কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে।

[তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)

হজরত মাওলানা ইউনুস বিন উমর পালনপূরী লিখেছেন, যে ব্যক্তি তার সম্পদের মাঝে বরকত হোক এ বিষয়ে আগ্রহী সে যেনো রাসুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নিম্নের দরুদ-শরিফটি পড়ে। [হিসনে হাসিন-২২০]
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ.

কোনো মুসলমানের কাছে যদি সদকা করার মত কোনো সম্পদ না থাকে তাহলে সে যেনো দরুদ শরিফটি দোয়ার মাঝে পড়ে, এটা তার জন্য জাকাতস্রূপ হবে। অর্থাৎ এতে তার সম্পদের মাঝে বরকত হবে এবং তা পবিত্র হবে। [হাকেম-৭১৭৫]

১২. ইবাদতে মনোনিবেশ করা

আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়াবি ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়।
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ (তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭)

১৩. রিজিক বৃদ্ধির কিছু দোয়া

اللهم اني اعوذ بك من الهم والحزن واعوذ بك من
العجزي والكسل واعوذ بك من الجبن والبخل واعوذ بك من غلبة الدين وقهر الرجال. رواه السيوطي في الجامع الصغير الرقم 2864 صحيح

اللهم سخر لي رزقي، واعصمني من الحرص والتعب فى طلبه، ومن شغل الهم، ومن الذل للخلق، اللهم يسر لي رزقاً حلالاً، وعجل لي به يا نعم المجيب.

اللهم يا باسط اليدين بالعطايا، سبحان من قسم الأرزاق ولم ينس أحداً، اجعل يدي عُليا بالإعطاء ولا تجعل يدي سفلى بالاستعطاء، إنك على كل شيء قدير.

اللهم ارزقني رزقاً لا تجعل لأحدٍ فيه منّة علي، ولا في الآخرة عليه تبعة، برحمتك يا أرحم الراحمين.

اللهم إن كان رزقي في السماء فأنزله، وإن كان في بطن الأرض فأخرجه، وإن كان بعيداً فقربه، وإن كان عسيراً فيسره، وإن كان قليلاً فأكثره وبارك فيه برحمتك يا أرحم الراحمين.

اللهم أكثر مالي وولدي، وبارك لي فيما أعطيتني، اللهم إني أسألك يا الله بأنك الواحد الأحد الصمد الذي لم يلد ولم يولد و لم يكن له كفواً أحد أن تغفر لي ذنوبي إنك أنت الغفور الرحيم.

اللهمّ إنّا نسألك عملاً باراً، ورزقاً داراً، وعيشاً قاراً

اللهمّ افتح لنا من خزائن رحمتك رحمة لا تعذبنا بعدها أبداً فى الدنيا والآخرة، ومن فضلك الواسع رزقاً حلالاً طيباً لا تفقرنا بعده إلى أحد سواك أبداً، وتزيدنا لك بهما شكراً وإليك فاقة وفقراً، وبك عمن سواك غنى وتعففاً

اللهم وسع على رزقى اللهم عطف على خلفك كما صنت وجهى عن السجود لغيرك فصنه عن ذل السوال لغيرك برحمتك يا ارحم الراحمين

اللهم إكفني بحلالك عن حرامك و اغنني بفضلك عمن سواك

اللهم إني أعوذ بك من الهم و الحزن و الكسل و البخل و ضلع الدين و غلبة الرجال .

আল্লাহ তাআলাআমাদের হারাম থেকে বেঁচে হালাল পন্থায় উপার্জন করার তৌফিক দিক এবং আয় রোজগারে বরকত দিক। আমিন।

মুফতী মাহমুদ হাসান
দারুল হাদীস (এম.এ,ইসলামিক স্টাডিস)
জামিয়াতুল আবরার বসুন্ধরা ঢাকা
দারুল ইফতা (ইসলামিক আইন ও গবেষণা বিভাগ) ঢাকা
আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (অনার্স) ঢাকা


1 COMMENT

Comments are closed.