সমরাস্ত্র শুধু তৈরি নয়, রপ্তানিও করব : প্রধানমন্ত্রী

15

সমরাস্ত্র আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো এবং সম্ভব হলে অস্ত্র রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটানোর জন্য ৭.৬২ মিলিমিটার অটোরাইফেল, বিভিন্ন ক্যালিবারের কার্তুজ এবং হ্যান্ড গ্রেনেড উৎপাদন করছে। বিভিন্ন বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্রের আমদানিনির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিতে আমি সমরাস্ত্র কারখানা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি। সবকিছু আমদানি না, আমরা নিজেরা করব এবং যেটা উপযুক্ত হবে, যুক্তিসঙ্গত হবে, প্রয়োজনে আমরা রপ্তানিও করব। সেটা মাথায় রাখতে হবে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কেনে। এরপর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে বিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করে। মিগ-২৯ এর প্রসঙ্গ টেনে সমরাস্ত্র কেনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তাদের বলেন, ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার হয়ে তো লাভ নেই। সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে দরকষাকষিতে বিজয়ের পর সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও নিরাপত্তার বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি এটা ঠিক। সমুদ্র আমাদের সম্পদ। এই সম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে এবং সম্পদ আহরণের জন্য এখন থেকেই আমাদের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৯ শতাংশ অতি-দরিদ্র থাকলেও আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দেশে আর অতি দরিদ্র থাকবে না। ২৪ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী সরকারের চলতি মেয়াদেই ১৪ শতাংশে নেমে আসবে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক হলো গ্রামীণ অর্থনীতিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি এবং ধনী-দরিদ্রের আয় বৈষম্য কমিয়ে এনেছি। জাতিসংঘ মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সুনাম অর্জনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যাতে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারে, সে বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে সচেষ্ট রয়েছি। সশস্ত্র বাহিনীর জন্য শিক্ষা, অবকাঠামো, সমরাস্ত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সরকারের সহযোগিতার চিত্রও তিনি কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যাতে ভবিষ্যতে নিজেদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে পারেন, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

বর্তমানের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। নেপালে ভূমিকম্পের পর সহায়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশটির সরকার চাইলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেখানে গৃহহীনদের ঘড়বাড়িও তৈরি করে দেওয়া হবে। দেশের সমরাস্ত্রের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সমরাস্ত্র কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতেই রেখেছেন। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর গত বছর এপ্রিলে সর্বশেষ তিনি এ মন্ত্রণালয়ে নিজের অফিসে এসেছিলেন।