মোদির সাক্ষাতের পর খালেদা ফুরফুরে মেজাজে

15

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ‘ফুরফুরে’ মেজাজে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এখনো অন্ধকারে রয়েছেন।

তিন মাসের আন্দোলনে ভাটা পড়া দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এমন উৎফুল্ল মনোভাব এখনো লক্ষ্য করা যায়নি। পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনকে আলাদাভাবে ১৫ মিনিট মোদির ওয়ান টু ওয়ান আলোচনাকেও ‘ব্যতিক্রমী’ বলেই মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। বৈঠক শেষে হোটেল সোনারগাঁও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও বেগম জিয়াকে বেশ ফুরফুরে দেখাচ্ছিল।

হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের শুধু এটুকুই বলেছিলেন, ‘খুব সুন্দর আলোচনা হয়েছে।’ রোববার রাতেও বেশ কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে খোলামেলা কথা বলেন বিএনপি-প্রধান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিগত ছয় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে এত উৎফুল্ল আর দেখা যায়নি। এর আগে তাকে চিন্তিত ও অন্যমনস্ক দেখা গেছে। মোদির সঙ্গে বৈঠকে আসার আগেও তাকে অনেকটাই গম্ভীর দেখা যায়। বৈঠক-পরবর্তীতে তাকে বেশ হাসিখুশি মনে হয়েছে। রাতে গুলশান কার্যালয়ে গিয়েও বেগম জিয়াকে খোশ মেজাজে দেখা গেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া অপর এক নেতা জানান, বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিক কথাবার্তাই বেশি হয়েছে। বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বাপর পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদিকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এ সময় মোদিও আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বলেছেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অবগত। তার দেশ সব সময় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে।

বিএনপির অভিযোগ, খালেদার সঙ্গে মোদির বৈঠকটি না হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টাই চালানো হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠকের আগের দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আর মোদির সফরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য ওই দিন বিকালেই দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন মোদি।

বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাধারণ রাজনৈতিক দলের নেতা বোঝানোর জন্য সরকার জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির মতো ছোট ছোট দলগুলোকেও মোদির সঙ্গে বৈঠক করানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে যে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে, তা ৪৫ মিনিটের বৈঠকেই স্পষ্ট হয়েছে।

এ ছাড়া ১৫ মিনিটের একান্ত বৈঠকেও এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে মনে করেন তারা। তাদের মতে মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার দেখা-সাক্ষাত না হলে বিএনপি আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ত। সরকারসহ সুশীলসমাজের অনেকেই বলতেন, বিএনপিকে ভারত গুরুত্বই দেয় না। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিও অনেক পিছিয়ে পড়ত। এটা দলের জন্য প্রেসটিজ ইস্যুও ছিল।

এ বৈঠকের ফলে আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারবে না।কী কথা হলো ১৫ মিনিটে : ১৫ মিনিটে মোদির সঙ্গে খালেদার ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক নিয়ে নেতা-কর্মীসহ উৎসুক সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য বিএনপি নেতা-কর্মীরা একে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। এ বৈঠকের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির আগ্রহেই ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মোদি নিজেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ও ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণকে ইশারায় উঠে যেতে বলেন। একইভাবে খালেদা জিয়াও বিএনপির প্রতিনিধিদের ইশারায় উঠে যেতে বলেন। এরপর আমরা সবাই বাইরে চলে যাই। তাই একান্তে কী বিষয়ে কথা হয়েছে তা দুই শীর্ষ নেতাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা মনে করছি, বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই একান্তে মোদির নিজের কিছু কথাবার্তাও বলেছেন; যা ভবিষ্যতে বিজেপির সঙ্গে বিএনপির গভীর সম্পর্ক তৈরি হতে পারে।’ এ নিয়ে বিএনপি-প্রধান কোনো নেতার সঙ্গেই কোনো কথা বলেননি বলে জানান তিনি।বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য বলেন, ‘একান্ত বৈঠকে কী কথা হয়েছে তা স্পষ্ট জানা না গেলেও আমরা কিছুটা ধারণা করতে পারছি।

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে কথাবার্তা হতে পারে। কারণ বেশ কয়েক দিন ধরে ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চান। তা হচ্ছে, প্রথমত, জামায়াতের সঙ্গ বিএনপি ছাড়তে পারবে কি না, দ্বিতীয়ত, তারেক রহমানকে আপাতত দলীয় রাজনীতি থেকে বাইরে রাখা যায় কি না, তৃতীয়ত, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ কিংবা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান কী?

এ বিষয়েই বেগম জিয়ার মতামত জানতে চান নরেন্দ্র মোদি। বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকেও সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করা হতে পারে।’ বিএনপির এক সূত্র জানায়, একান্ত বৈঠকে স্পর্শকাতর বিষয় উঠে আসায় আপাতত কোনো পক্ষ থেকেই এ নিয়ে মুখ খোলা হচ্ছে না।

কয়েক দিন পরই এ বৈঠকের বিষয়টি খোলাসা হবে। বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেছন, ‘মোদির সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা সবাই কথা বলেছি। নরেন্দ্র মোদিও খোলামেলা কথা বলেছেন। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে অন্তত ১৫ মিনিট একান্তে কথা হয়েছে। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, তা আমরা জানি না।

সূত্র জানায়, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের শুরুতে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। নরেন্দ্র মোদিও তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অত্যন্ত চমৎকার ও খোলামেলা পরিবেশে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। দেশে কোন সরকার আছে, তা বড় কথা নয়। সরকার আসবে, যাবে। বৈঠকে মোদি বিএনপির কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং এ ক্ষেত্রে ভারতের গণতান্ত্রিক অবস্থানের কথাও বলেন।

নরেন্দ্র-খালেদার বৈঠকে বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কারাগারে থাকার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। আর মিথ্যা মামলায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানীর অভিযোগ করা হয়েছে।