বৈঠকে কোনো ইস্যুতে দ্বিমত পোষণ করেননি মোদি

33

বিএনপির সাথে ৪৫ মিনিটের বৈঠকে কোনো ইস্যুতে দ্বিমত পোষণ করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈঠকের বেশির ভাগ সময় জুড়েই বাংলাদেশের ‘সঙ্কটাপন্ন’ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি নেতারা। সঙ্কট উত্তরণে জনগণ দ্রুত নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন আশা করছে, সে প্রসঙ্গও এসেছে আলোচনায়। নরেন্দ্র মোদি বিএনপির তরফ থেকে উত্থাপিত বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। বৈঠকের শেষ ১৫ মিনিট তিনি একান্তে কথা বলেন খালেদা জিয়ার সাথে। বৈঠকের আদ্যোপান্ত নিয়ে বিএনপির মধ্যে ‘ইতিবাচক’ মনোভাব বিরাজ করছে।

প্রটোকলে না পড়ায় বাংলাদেশ সফরে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করবেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কিছু দিন ধরেই আলোচনা ছিল। অবশ্য বিএনপির অভ্যন্তরে বৈঠক হওয়ার বিষয়ে পজিটিভ সিগন্যাল ছিল আগে থেকেই। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়ার সাথে মোদির বৈঠকের কোনো সুযোগ নেই। গত রোববার সফরের শেষ দিনে হোটেল সোনারগাঁওয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকের একপর্যায়ে ১৫ মিনিট একান্তে কথা বলেন তারা। বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির নেতারা বলেছেন, বৈঠক ‘সফল’ হয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার সাথে ১৫ মিনিট কী কথা হয়েছে, তা বলতে পারেননি তারা। তবে নেতাদের সবাই বলছেন, বৈঠকের পর রাতে গুলশান কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে ইতিবাচক মুডের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, খালেদা জিয়া নরেন্দ্র মোদির সাথে একান্ত আলাপের বিষয় নিয়ে এখনো কারো সাথে কথা বলেননি। তবে আলোচনা হয়েছে অত্যন্ত সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। বিএনপির পক্ষ থেকে বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বাপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোদিকে অবহিত করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলাসহ সার্বিক বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরা হয়। কোনো বিষয় মোদি দ্বিমত করেননি; বরং কোনো কোনো বিষয়ে তিনি একমত পোষণ করেন।

ওই নেতা বলেন, গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টি তথ্য উপাত্তসহ বৈঠকে তুল ধরা হয়। এ সময় মোদি বলেন, তিনি এ বিষয়ে অবহিত আছেন। পরিস্থিতি তিনি পর্যবেক্ষণ আগেও করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন।

বৈঠকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের বিষয়টি উঠলে মোদির পাশে বসা সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বিষয়টি মোদিকে ব্রিফ করেন। এ সময় বিষয়টি ইতিবাচক সমাধানের আশ্বাস দেন মোদি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রতিবেশী ও বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত যে শক্তিশালী দেশ তা তারা প্রমাণ করতে চাইছে। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার আশ্বাসও তারা পেয়েছে। তা ছাড়া মোদির যে ধ্যানধারণা, তাতে দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ কিছু পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো নির্বাচন। যার মাধ্যমে একটি জনগণের সরকার দেশ পরিচালনা করবে। এর বাইরে গেলে ভারতের জন্য মঙ্গল হবে না।

বিএনপির এক নেতা বলেন, মোদির সফর ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন তারা। তবে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে মোদি তার বক্তব্যে কোনো কথা না বলায় হতাশ হওয়ার দিকও রয়েছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান মোদির সফর নিয়ে গতকাল বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জিয়াউর রহমানের ধারণা উপলব্ধি করেছেন। শুধু নিজ দেশের উন্নয়ন করলেই হবে না। সার্কভুক্ত দেশের উন্নয়ন করতে হবে। জিয়ার ধারণাকে মোদি উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। মোদির সাথে সকলে মিলে আমরা সে প্রচেষ্টা সফল করব। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক করতে হবে। কোনো সরকার বা দলের সাথে সম্পর্ক করলে বেশি দিন টিকে থাকে না- এ কথা সকলের উপলব্ধি করতে হবে।