বৈশাখে ছাত্রী লাঞ্ছনাঃ জাবি ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার

73

পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় এক আদিবাসী ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার প্রমাণ মেলায় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বহিষ্কৃত ওই পাঁচজন হলেন, শহীদ সালাম-বরকত হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক রসায়ন বিভাগের ছাত্র নাফিজ ইমতিয়াজ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য ও জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত ইমতিয়াজ ওরফে বিজয়, ছাত্রলীগ কর্মী এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের আবদুর রহমান ইফতি, নুরুল কবির এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের রাকীব হাসান। এরা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

পয়লা বৈশাখের একদিন পর জীববিজ্ঞান অনুষদের ওই ছাত্রী

উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

পয়লা বৈশাখের দিন বিভাগের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই ছাত্রী তাঁর সহপাঠীর সঙ্গে নিজের হলে ফিরছিলেন। ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বর সংলগ্ন চৌরঙ্গীতে আসার পর দুই ছেলে তাদের দাঁড় করিয়ে কথা বলে। পাশেই আরও তিনজন দাঁড়িয়ে ছিল।

একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কেউ একজন ওই ছাত্রীর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে ঢুকে যান। তখন তাঁরাও (ওই ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠী) ব্যাগ ফিরিয়ে আনতে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে যান। জঙ্গলের ভেতর ওই পাঁচজনের সঙ্গে তাদের বাগবিতাণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের

নেতা-কর্মীরা তাঁদের মারধর এবং গালিগালাজ করেন।

এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী নুরুল কবির ছাত্রীর মুঠোফোন ও ব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। নিশাত ইমতিয়াজ ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁরা ওই ছাত্রীর হাত ধরে টানাটানি করে। রাকীব হাসান এ সময় শাড়ি ধরে টান দিলে ওই ছাত্রী চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষজন জড়ো হয়। এতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যায়।

হলে গিয়ে ওই ছাত্রী বিষয়টি জ্যেষ্ঠ ছাত্রীদের জানান। পরদিন বুধবার দিনব্যাপী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সমঝোতার চেষ্টা করে। কিন্তু হলের ছাত্রীরা এতে রাজি হননি। রাত নয়টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলের সামনে গিয়ে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ছাত্রী ও কয়েকজন আদিবাসী শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ততক্ষণে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে। সাংবাদিকেরা হলের সামনে আসলে আলোচনা অসমাপ্ত রেখেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় ছিনিয়ে নেওয়া মুঠোফোনটি এক ছাত্রীর হাতে দিয়ে যান তাঁরা।

এরপর হলের জ্যেষ্ঠ ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে প্রক্টরের কাছে এবং পরে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ওই ছাত্রী।