গত তিন মাসে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১২টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিচারকাজ শুরু করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে এসব মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল।
এদিকে তারেকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করার পর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার তাঁর অবস্থান জানা সত্ত্বেও তাঁকে প্রত্যর্পণের ব্যাপারে এত দিন ব্রিটিশ সরকারের কাছে কোনো অনুরোধ জানায়নি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বুধবার বলেন, তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি, তারেক কোথায় আছে। সে ওখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে। আমরা তিন মাস আগে ইন্টারপোলকে রেড অ্যালার্ট দিতে বলেছি। কিন্তু তাদের কিছু জিজ্ঞাসা ছিল, তাই দেরি হলো। এখন প্রয়োজনে আমরা ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি দেব।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে তারেকের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আরও অনেক মামলা আছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব মামলার নথি আসছে। এগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শাখা সূত্র জানায়, লন্ডনে অবস্থানরত বিভিন্ন মামলায় পলাতক তারেক রহমান গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী, দেশের স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতি দেন। বিদেশে অবস্থান করেই তিনি রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য দলের এবং ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে গত ৫ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর তারেক লন্ডনে বসে সারা দেশ থেকে রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার চালান এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেন। তাঁর এসব বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব মামলা ও জিডি করা হয়। এসব মামলা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসে। সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত সময়ে এসব মামলা করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় এসব মামলার অনুমোদন দিচ্ছে।
তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একই ঘটনায় এতগুলো মামলা সারা দেশে হলে তার বিচারকাজ কীভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, এক ঘটনার জন্য একবারই বিচার হবে। কিন্তু ঘটনা অনেক। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান আসামি তারেক রহমান। মূলত এটাকে কেন্দ্র করেই রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব মামলার অনুমোদনপত্র আদালত ও সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন দেওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা ও ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১২৩-ক, ১২৪-ক, ১২০-বি, ১২১, ১২১-এ, ১২৪-এ, ২৯৫ ধারা অনুযায়ী মামলা হয়েছে।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। এরপর ২০০৮ সালে তিনি ‘চিকিৎসার জন্য’ যুক্তরাজ্যে যান।
নিজস্ব প্রতিবেদক ও লন্ডন প্রতিনিধি জানান, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির বিষয়ে জানতে চেয়ে ফ্রান্সে অবস্থিত ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে মেইল পাঠানো হলে সেখান থেকে জানানো হয়, পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করার বিষয়টি কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। আসামিকে গ্রেপ্তারে সংস্থাটি কোনো বাহিনী পাঠায় না বা কোনো দেশকে চাপও দিতে পারে না। তারা শুধু এ-সংক্রান্ত তথ্য ১৯০টি সদস্যদেশকে জানিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকায় ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) প্রধান মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তিন মাস আগে ইন্টারপোলে এ নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। মামলাটির তদন্তকারী সিআইডির অনুরোধে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
তবে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির ফলে যুক্তরাজ্য থেকে কোনো আসামির প্রত্যর্পণ ঘটেছে, এমন নজির পাওয়া যায়নি। আবার যুক্তরাজ্য সরকার চাইলেই কাউকে প্রত্যর্পণ করতে পারে না। আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও না। কারণ, সংশ্লিষ্ট আসামির আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এদিকে রেড নোটিশের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে তথ্য পাঠানো হয়েছে, ইন্টারপোল তা প্রকাশ করেছে মাত্র। এর আগে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছিলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে। এই রেড অ্যালার্ট তারই বহিঃপ্রকাশ। এটি সরকারের আরেকটি নাটক।
Sign in
Welcome! Log into your account
Forgot your password? Get help
Password recovery
Recover your password
A password will be e-mailed to you.