একজন শিশুকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডাক্তাররা আতঙ্কিত হন না।
তারা তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত নেন না।
বরং, তারা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন।
প্রথমে তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন।
তারপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
রোগীকে স্থিতিশীল করেন।
শুধু তখনই তারা চিকিৎসা শুরু করেন।
তারা নিয়ন্ত্রণ হারান না, বরং পুরো সময় শান্ত ও সংযত থাকেন।
প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
আপনার সন্তান যখন কথা শোনে না, যখন তারা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না বা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যায়— তখন বেশিরভাগ বাবা-মা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেন।
তারা প্রথম যে “চিকিৎসা” মাথায় আসে, সেটাই প্রয়োগ করতে শুরু করেন।
কখনো নরমভাবে অনুরোধ করেন, কখনো কঠোরভাবে আদেশ দেন, কখনো আবার পরিণতির কথা মনে করিয়ে দেন।
এটা স্বাভাবিক যে, একজন বাবা-মা হিসেবে আপনি সমস্যার সমাধান করতে চান…
বিশেষত যদি আপনার সন্তান ADHD-তে আক্রান্ত হয়।
কখনো কখনো আপনি মনে করেন, “এটা আমাকে অবশ্যই ঠিক করতে হবে।”
কিন্তু যখন এই “চিকিৎসা” কাজ করে না…
যখন অনুরোধ করেও কাজ হয় না…
যখন আপনার সন্তান আপনার কথা এড়িয়ে যায়…
যখন তারা প্রতিশ্রুতি দেওয়া কাজ করে না…
তখন আপনার ধৈর্য ফুরিয়ে আসতে শুরু করে।
এটাই সেই পরিস্থিতি, যেখানে আপনি সহজেই Parent-Child Anger Loop-এ আটকে পড়তে পারেন।
কিন্তু যদি আপনার এমন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া থাকে, যা আপনাকে যে কোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে সাহায্য করে?
আমি একে বলি ৩-ধাপের শান্ত থাকার ফর্মুলা।
ধাপ #১: সারাদিন নিজের মনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখুন
আমরা সাধারণত তখনই ধৈর্য হারাই, যখন আমাদের সন্তান আমাদের পুরোনো মানসিক ক্ষতগুলোর উপর আঘাত করে।
এটাই সেই সময়, যখন আমরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাই— চিৎকার করি, শাসন করি, বা শাস্তির ভয় দেখাই।
তাই, সন্তানের আচরণ সামলানোর আগে প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার নিজের মধ্যে কী চলছে।
- কোন কথাগুলো আপনাকে বেশি রাগিয়ে তোলে?
- কোন আচরণ আপনাকে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত করে?
- কোন পরিস্থিতিগুলো আপনার শক্তি নিঃশেষ করে দেয়?
- কোন মানুষগুলো আপনাকে নেতিবাচক অনুভূতি দেয়?
- আপনার শৈশবের কোনো অভিজ্ঞতা কি এসব ট্রিগার তৈরি করেছে?
প্রত্যেক বাবা-মায়েরই কিছু না কিছু ট্রিগার থাকে, যা তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে বাধ্য করে।
কিন্তু যদি আপনি আপনার ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করতে পারেন, তবে আপনি সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পাবেন।
ধাপ #২: আপনার তীব্র আবেগগুলো নিয়ন্ত্রণ করুন
যে শিশুর বাবা-মা শান্ত থাকতে পারে, সেই শিশুরাও সাধারণত বেশি শান্ত থাকে।
তাই, যদি আপনি চান যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, তবে আপনাকে আপনার আবেগগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।
হ্যাঁ, মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন কিছুটা সহায়তা করতে পারে।
কিন্তু এটি মাত্র ৩০-৫০% পর্যন্ত ধৈর্য বাড়াতে পারে।
বিশেষত, যখন কোনো বিশেষ দিনগুলোতে আপনার মেজাজ খারাপ থাকে…
- যখন আপনার সন্তান ঘরের ভেতর কুকুরকে গোসল করাতে চায়,
- যখন তারা ফ্রিজের গায়ে হাতের ছাপ দিয়ে ছবি আঁকে,
- যখন তারা থালা বাসন ধুতে বা ঘর পরিষ্কার করতে অস্বীকৃতি জানায়।
এসব ক্ষেত্রে শুধু কিছুক্ষণ গভীর শ্বাস নিলেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে না।
বরং, আপনাকে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য কার্যকর কৌশল তৈরি করতে হবে।
- আপনার সন্তান দেরি করলে আপনি কীভাবে শান্ত থাকতে পারেন?
- যখন তারা চিৎকার করে, অতি সক্রিয় হয় বা মেল্টডাউন হয়, তখন আপনি কী করবেন?
আপনার ট্রিগারগুলো (যা আপনি ধাপ #১-এ চিহ্নিত করেছেন) মনে করুন, এবং প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য একটি পরিকল্পনা করুন, যাতে আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ধাপ #৩: “হারানোর” পর সম্পর্ক মেরামত করুন এবং শক্তিশালী করুন
কেউই নিখুঁত নয়।
এমন সময় আসবে, যখন আপনি আপনার ধৈর্য হারাবেন।
এবং না, এটি আপনাকে খারাপ বাবা-মা বানায় না।
তবে এই মুহূর্তগুলোই আপনার কাছে সবচেয়ে কষ্টদায়ক হতে পারে।
এই সময় আপনার মনে হতে পারে, “আমি যদি একটু ধৈর্য ধরতাম!”
কিন্তু মনে রাখবেন, মানুষ মাত্রই ভুল করে।
এবং আসল বিষয় হলো, ভুল করার পর আপনি কী করছেন।
অনেক সময়, চিৎকার বা ঝগড়ার পর বাবা-মায়েরা দূরত্ব তৈরি করেন, নীরব হয়ে যান।
কিন্তু শিশুদের জন্য নীরবতা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
তারা ভাবতে শুরু করে, “আমাকে কি বাবা-মা আর ভালোবাসে না?”
তাই, ঝগড়ার পর আপনার সন্তানকে উপেক্ষা করবেন না।
বরং, তাদের কাছে যান, জড়িয়ে ধরুন, বলুন যে আপনি তাদের ভালোবাসেন।
তারপর, সন্তানকে সাথে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করুন, যাতে এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে এড়ানো যায়।
উদাহরণস্বরূপ, আপনার পরিকল্পনাটি একটি সহজ বাক্য হতে পারে:
“যখন পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করবে, আমরা চিৎকার করব না, বরং ফিসফিস করে বলব।”
এরপর এটি ঘরের কোথাও দৃশ্যমান জায়গায় টাঙিয়ে রাখুন, যেন এটি সবসময় মনে থাকে।
এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করলে কী হবে?
- আপনি Parent-Child Anger Loop ভাঙতে পারবেন।
- আপনি শান্ত ও ধৈর্যশীল বাবা-মা হয়ে উঠবেন।
- আপনার রাগ ও হতাশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, এগুলো আপনার প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করবে না।
- আপনার সন্তান আপনার কাছ থেকে শিখবে যে, বড় আবেগগুলো কীভাবে সুস্থভাবে সামলাতে হয়।
এটি রাতারাতি সম্ভব নয়… কিন্তু ধাপে ধাপে হবে।
পিয়ানো শেখার মতোই, আপনি ধৈর্য ধরে প্রতিদিন একটু একটু করে অনুশীলন করলে শিগগিরই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।