সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত : ব্যালট বাক্সে হাত দিলে গুলি

37

আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ইসি। আজ দুপুরে আগারগাঁওয়ের এনইসি ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বৈঠক শেষে বিকেলে কমিশনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইসি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনির সাথে বৈঠকে বসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর নির্দেশনা দেন সিইসি। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যালট বাক্সে হাত দিলে তাদের কোমরের নিচে গুলি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনিকে বলা হয়, অস্ত্র প্রদর্শনের জন্য জন্য। এটিকে ব্যবহার করতে হবে। দায়িত্ব পালনে কেউ অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৈঠকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় রিটার্নিং অফিসারদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন সিইসি। নির্বাচনে আচরণবিধি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন সিইসি। তাদের পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা আদায়ের হার কম হওয়ায় রিটার্নিং অফিসারদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার নির্দেশ দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সব বাহিনীর কাছ থেকে আমরা শুনলাম নির্বাচন পূর্ববর্তী ব্যবস্থা কি রকম আছে। সবাই বলেছেন নির্বাচন পূর্বাবস্থা খুব ভালো আছে। তবে এসব আমরা খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। এরপর আমরা কমিশনাররা সেনাবাহিনী নিয়োগের ব্যাপারে বৈঠক করব। কোন বাহিনী থেকে কতজন লোক থাকবে, ভোটকেন্দ্রে কতজন থাকবেন, বুথে কতজন থাকবেন এ বিষয়ে তারা ঠিক করবেন। আমরা তা অনুমোদন করব।
সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হবে কি-না এ নিয়ে বৈঠকে সেভাবে আলোচনা হয়নি দাবি করে সিইসি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলার বাহিনীর লোকজন আছেন- তারা বলছেন এ পর্যন্ত সবকিছু সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। আমি তাদেরকে বলেছি আপনারা খেয়াল রাখেন। এটা ঝড়ের আগের থমথমে অবস্থা কি-না। আমরা কাউকে কোনো সুযোগ দেব না। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আসলে সেনাবাহিনী নিয়োগ দেয়া হয় নির্বাচনের কয়েকদিন আগে। সেনাবাহনী নিয়োগের আরো পাঁচ-সাতদিন সময় আছে। আমরা হয়তো কাল পরশুর মধ্যে এ ব্যাপারে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। আজকে তাদেরকে বলে রাখা হয়েছে সবাই যাতে প্রস্তুত থাকে।
বৈঠক শেষে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের প্রয়োজেন নেই। এসম্পর্কে সিইসি বলেন, সেনাবাহিনী নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব আমরা। কারো বলার উপর সিদ্ধান্ত নেব না। এটা বিচার বিশ্লেষণ করার এখতিয়ার কমিশনের অন্য কারোর না।
সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে প্রার্থীরা আস্থা পায় এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু প্রার্থী না আমাদের ভোটারদের কথাও চিন্তা করতে হবে। প্রার্থী তো মাত্র কয়েকজন। কিন্তু ভোটাররা অনেক। তারা যেন নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করা, ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং নির্বাচনের পরেও যাতে কোনো ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে আমার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছেন, তারা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করবেন।
সিইসি আরো বলেন, আমরা এটিও বলেছি কোনো রকম অহেতুক ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ যদি বল প্রয়োগ করে দ্বিগুন বল প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করা হবে। তারা আশ্বস্ত করছেন যত সংখ্যক বাহিনী দেয়ার কথা তার চেয়েও বেশি বাহিনী তাদের আছে। আমরা বলেছি শুধু বেশি বাহিনী দিলেই হবে তা তাদেরকে কার্যকর করতে হবে। যাতে করে কোনো অহেতুক ঘটনা না ঘটে। নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরনের অনেক অভিযোগ উঠেছে। আমি আগেও বলেছি ঢালাওভাবে অভিযোগ করে কোনো লাভ নাই। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করুন। এরপর তদন্ত করব ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিইসি আরো বলেন, প্রতিদিন রিটানিং কর্মকর্তারা তথ্য দিচ্ছেন কতজনকে কত টাকা জরিমানা ও দণ্ড দেয়া হলো। এগুলো সাংবাদিকরা তুলে ধরুন। আমরা মেয়র প্রার্থীকেও সতর্ক করেছি। কয়েকজন প্রথম ভুল করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং বলেছেন এধরনের ভুল আর হবে না। আমরা এ ব্যাপারেও সতর্ক আছি। কেউ যদি আবার ভুল করে তা দেখা হচ্ছে। আমরা শুধু প্রার্থীদের মাধ্যমেই নয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও আচরণ বিধি লংঘনের যেসব অভিযোগ আসছে সেসব ব্যাপারে রিটানিং কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার জন্য বলেছি। এসব তদন্ত করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি।
এসময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদের নির্বাচনী প্রচারণার চলানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি তিনি কোনো উত্তর দেননি। এসময় তিনি বলেন, আচরণবিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে মন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ বা তাদের পদমর্যাদায় যারা তার এর আওতায় পড়বেন।
বিকেলে কমিশনের সভা আহবান করে সিইসি। সেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ প্রার্থীর দাবি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জন্য ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।