বোনকে উদ্ধারে খদ্দের সেজে যৌনপল্লীতে ভাই

72

বছর তিনেক আগে তার বোন হারিয়ে যায়। এক ফেরিওয়ালার মাধ্যমে জানতে পারেন তার বোন বিহারের বেগুসরাই জেলার যৌনপল্লীতে থাকেন। হারিয়ে যাওয়া বোনকে উদ্ধার করতে ওই যুবক ‘খদ্দের’ সেজে হাজির হন ওই যৌনপল্লীতে। এর পর পুলিশের সহায়তায় বোনকে উদ্ধার করেন ওই যুবক।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিহারের বেগুসরাই জেলার যৌনপল্লী বখরী এলাকায় গিয়ে ওই যুবক ২০০ টাকা তুলে দিয়েছিলেন এক দালালের হাতে। তার পর সেই যুবকের ‘পছন্দ’ করা যৌনকর্মীর ঘরে যাওয়ার অনুমতি মিলেছিল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই যুবকটি বেরিয়ে আসেন সেই ঘর থেকে। কিছুক্ষণ পর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ফিরেন সেই ‘কোঠা’য়।

পরে বিহারের পুলিশ দুই নারীকে দেহব্যবসা থেকে উদ্ধার করে। তাদের একজন হলেন বিহারেরই আরেক জেলা শিবহরের বাসিন্দা প্রতিমা (ছদ্মনাম)।

ফোনে বিবিসিকে প্রতিমা জানিয়েছেন, বছর তিনেক আগে অশোক খলিফা নামে এক ব্যক্তি সীতামাড়ী জেলা থেকে তাকে ফুঁসলিয়ে বুখরীতে নিয়ে যায়। তার পর থেকে ওই কাজ করাতে বাধ্য করেছিল সে। ছোট ছেলেকে নিয়ে তখন থেকেই বুখরীর ওই যৌনপল্লীতে একরকম বন্দিজীবন কাটাতেন তিনি। বাইরের জগতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতে দেয়া হতো না তাকে।

কীভাবে তার ভাই সন্ধান পেল, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে আমার ঘরে এক ফেরিওয়ালা এসেছিল। তাকে দেখেই চিনতে পারি- সে আমার বাপের বাড়ির এলাকার লোক। সে বলেছিল যে আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি তার মোবাইল নম্বরটা নিয়ে রেখেছিলাম। মাঝে ফোনে কয়েকবার আলোচনা করেছি তার সঙ্গে যে কীভাবে ওখান থেকে পালানো যায়।

পরে গ্রামে ফিরে এসে ওই নারীর আত্মীয়স্বজনকে পুরো ঘটনা জানান ওই ফেরিওয়ালা। বাপের বাড়ির কয়েকজন ওই নারীকে যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করার জন্য বেগুসরাইয়ে হাজির হন।

প্রতিমার ভাই মনোজ (ছদ্মনাম) বিবিসিকে বলেন, ‘ফোনেই ওই ফেরিওয়ালা আমার বোনকে জানিয়ে রেখেছিল যে আমি আসছি। সেই মতো আমি অশোক খলিফা নামে ওই দালালের কাছে যাই খদ্দের সেজে। ২০০ টাকায় রফা হওয়ার পর আমার সামনে দুজনকে হাজির করা হয়েছিল। চোখের ইশারা করে দিয়েছিলাম বোনকে। তার ঘরে গিয়ে বলে আসি যে পুলিশ নিয়ে আসছি একটু পরে।’

এর পর থানায় গিয়ে পুলিশ দল নিয়ে ফিরে আসি। তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় প্রতিমা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বাসিন্দা আরেক নারীকে।

বুখরী থানার ওসি শরৎ কুমার জানিয়েছেন, ‘প্রতিমাকে উদ্ধার করার পরের দিনই মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। তার পরেই তার বাবা-মায়ের হেফাজতে তুলে দেয়া হয়েছে’।

অভিযোগপত্রে নাম থাকা নাসিমা খাতুন নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত অশোক খলিফা এখনও পলাতক।