খুন হওয়ার আগে থানায় গিয়েছিলেন নীলয়

22

সদ্য খুন হওয়া ব্লগার নিলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীলয় এক বারের জন্য হলেও থানায় গিয়েছিলেন।পুলিশের তদন্তেই এমন তথ্য জানা যাচ্ছে। খুন হওয়ার আগে নীলয় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছিলেন।

সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এই হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নীলয়ের ফোনের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানতে পেরেছে। তবে ঠিক কী কারণে নীলয় থানায় গিয়েছিলেন তা জানাননি তদন্ত কর্মকর্তারা।

মৃত্যুর আগে নীলয় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছিলেন, তাকে কেউ অনুসরণ করছে। এ বিষয় টের পেয়ে তিনি থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। পরে গত শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে গোড়ানের নিজ বাসায় তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নীলয় যেদিন থানায় জিডি করতে চেয়েছিলেন সেদিন তার সেল ফোনের রেকর্ড থেকে পাওয়া তথ্য প্রমাণ করে খিলগাঁও থানা এলাকায় তার অবস্থান ছিলো। তারপরও সেখানে তিনি জিডি করতে সত্যিই গিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

চাঞ্চল্যকর নীলয় হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে আছেন পুলিশের মতিঝিল ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারেক বিন রশিদ। কমিটি একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে জমাও দিয়েছে।

প্রতিবেদনে কমিটির সদস্যরা নীলয়ের জিডি না নেওয়ায় সেসময় খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিউটি ইনচার্জের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল ডিভিসনের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেনও বিষয়টি স্বীকার করে জানান, যদি এটি প্রমাণ হয় যে নীলয় জিডি করতে সেদিন খিলগাঁও থানায় গিয়েছিলেন এবং পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করেছে তাহলে দায়ীদের অবশ্যই আটক করা হবে।

তবে জানা গেছে, গত ১৪ মে আনুমানিক রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে নীলয় খিলগাঁও থানায় গিয়েছিলেন। সেসময় দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুল ইসলাম তার জিডি গ্রহণ করেননি। বরং তিনি তাকে যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এসআই বিষয়টি নিয়ে তার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেননি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে বুধবার এসআই শামসুলের মোবাইলে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একই বিষয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ ভুঁইয়া বলেন, চলমান তদন্তের স্বার্থে তিনি এখন এ বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না। তিনি বলেন, কারও জিডি গ্রহণ করা ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব। কেউ এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই এর দায় দায়িত্ব আমার নয়।

এদিকে নীলয় হত্যায় জড়িত সন্দেহে গোয়েন্দারা এখন আসিফ আদনান নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের স্লিপার সেলের সমন্বয়ক। গোয়েন্দারা বলছেন, তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে শুধু নীলয় নয় বরং অন্য খুনের রহস্যেরও সমাধান সম্ভব হবে।

অবশ্য গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে আদনানকে একবার গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে তিনি মুক্তি পান।

তদন্তকারীরা বলছেন, নীলয়ের খুনিদের মধ্যে একজন বাঁহাতি ছিলেন। তারা ওই খুনিসহ তার দুই সঙ্গীকে খুঁজছেন। পুলিশ সূত্র বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী পুলিশ তিন খুনিকে শনাক্ত করেছে।

উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়ে তারা পুরো হত্যাকাণ্ডটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছেন। খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ তাদের।