ভাঙাচোরা ও পোচকানো হলেও গম খাওয়ার উপযোগী

27

ব্রাজিল থেকে আনা গমের দানা ভাঙা-চোরা, পুচকানো ও পোকাওয়ালা হলেও খাদ্য উপযোগী বলে মত দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

রোববার আদালতে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এ মত দেয়া হয়েছে। ব্রাজিল থেকে আমাদানি করা গম পচা ও খাদ্য অনুপোযোগী বলে অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তের পর তাদের রিপোর্ট আজ আদালতে জমা দেয়। খাদ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস এ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমাদানীকৃত গমের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদামে মজুতকৃত গমের ৫৭টি নমুনা নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল মোতাবেক ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম চুক্তিপত্রের গ্রহণীয় সীমার মধ্যে পাওয়া যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এ গম প্রেরণ করা হলে তাতে প্রোটিনের মাত্রা যাচাই করে চুক্তিপত্রে বর্ণিত নির্দেশের চেয়ে বেশি প্রোটিন রয়েছে মর্মে ফলাফল দেয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৪টি নমুনা বিসিএসআইআর-এ (সাইন্স ল্যাব) পাঠানো হলে গমের মান ভাল বলে প্রত্যয়ন করা হয়।

প্রতিবেদনটি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে জমা দেয়া হয়। এ বিষয়ে আগামী ৮ জুলাই পরবর্তী শুনানি হবে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

আদালতে খোকন বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুযায়ী গমের শষ্যদানা ভাঙাচোরা পুচকানো ও পোকা ওয়ালা।’

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘গমের শষ্যদানা ভাঙাচোরা পুচকানো, ও পোকা ওয়ালা হলেও খাদ্য উপযোগী।’

শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার খোকন আদালতকে বলেন, ‘সরকার পক্ষের দেয়া প্রতিবেদন আমরা ভালো করে দেখবো। তারপর আদালতে কথা বলবো। এজন্য সময় প্রয়োজন।’

এরপর আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৮ জুলাই দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে গত ৩০ জুন ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গম খাদ্য উপযোগী কি না তা পরীক্ষা করে জানাতে খাদ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আমদানিকৃত গম পরীক্ষার জন্য কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

গম আমদানির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন অ্যাডভোকেট পাভেল মিয়া। রিটে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বারি) এর মাধ্যমে গম পরীক্ষার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

এছাড়া মানহীন গম আমদানি এবং সরবরাহ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, বিএসটিআই ও বারির ল্যাবেরটরিতে পরীক্ষার কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, অনিয়মের অভিযোগ কেন তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হবে না মর্মে রুল চাওয়া হয়।

রিটে খাদ্য সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়। আবেদনে গম নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনও যুক্ত করা হয়।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মান নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো বিভাগের মান নিয়ে কোনো সনদ দেয়নি। বন্দরে অবস্থানকারী খাদ্য অধিদপ্তরের রসায়নবিদেরা এই গমের বেশ কয়েকটি চালানকে ‘বি’ ক্যাটাগরির বা মাঝারি থেকে নিম্নমানের হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।

এসব জেনেও খাদ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক সারোয়ার খান চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ওই গমের ছাড়পত্র দেয়ার নির্দেশ দেন। অধিদপ্তরের আমদানি-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামত, চিঠি ও পর্যালোচনা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এই গম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশন হিসেবে সরবরাহের পর এর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের সব বিভাগীয় কার্যালয় এই গমকে নিম্নমানের এবং খাওয়ার অযোগ্য উল্লেখ করে একাধিকবার চিঠি দেয়। তারপরও খাদ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বারবার বলছে, এই গম খাদ্য অনুপোযোগী নয়।