পাকিস্তান থেকে পারমানবিক অস্ত্র কিনতে পারে আইএস!

18

ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এত দ্রুত সক্ষমতা অর্জন করছে যে আগামী এক বছরের মধ্যে সংগঠনটি প্রথম কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হতে পারে।

নিজেদের নীতি প্রচারের জন্য প্রকাশিত দাবিক পত্রিকায় সংগঠনটি এই দাবি করেছে বলে জানিয়েছে বৃটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

আইএস’র বন্দী বৃটিশ নাগরিক ফটোসাংবাদিক জন ক্যান্টলির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লেখা প্রবন্ধটিতে আইএস নিজেদের ‘আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ফোরক ইসলামপন্থী সংগঠন’ হিসেবে দাবি করে।

প্রবন্ধতে আরো জানানো হয়, ‘পরবর্তী ১২ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সংগঠনটির আন্দোলনের শিকড় এত দ্রুত আর এত গভীরে ছড়িয়ে যাবে, যা আধুনিক বিশ্ব কখনো দেখেনি’।

ফটোসাংবাদিক ক্যান্টলিকে সন্ত্রাসী সংগঠনটি নিজেদের প্রচারণার কাজে ব্যবহার করে থাকে এবং আইএস’র ইউটিউব ধারাবাহিক ‘লেন্ড মি ইওর ইয়ারস’-সহ বেশ কয়েকটি ভিডিও বার্তা প্রকাশে ক্যান্টলির সাহায্য নিয়েছে সংগঠনটি।

‘দ্য পারফেক্ট স্টর্ম’ শীর্ষক প্রবন্ধে আইএস’র সাথে একাত্মতা ঘোষণাকারী বোকো হারামের মতো ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশকে এক কাতারে এনে একটি বৈশ্বিক আন্দোলন সৃষ্টিতে সহায়তা করবে বলে জানানো হয়।

প্রবন্ধতে আরো বলা হয়-

এখনো যেসব ভীষণ রকমের মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিজেদের আয়ত্তে নিতে পারেনি আইএস, যেমন- পারমাণবিক অস্ত্র, সেগুলো করায়ত্ত করার আগে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, বিমানবিধ্বংসী আগ্নেয়াস্ত্র’ ইত্যাদি মজুদ করছে সংগঠনটি।

‘ব্যাংকে ইসলামিক স্টেটের লক্ষ-কোটি ডলার রয়েছে। তাই অস্ত্রের দালালদের মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছ থেকে অঞ্চলটির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাহায্য নিয়ে একটি পারমাণবিক অস্ত্র কেনা আইএস’র জন্য কোনো ব্যাপারই হবে না।’

অবশ্য এরকম দৃশ্য এখনো বাস্তবতা থেকে অনেকটা দূরে স্বীকার করে প্রবন্ধতে বলা হয়, ‘এই দৃশ্য হলো আইএস নিয়ে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের যাবতীয় ভয়ভীতির সমষ্টিগত ফলাফল এবং এক বছর আগে আইএস’র জন্য এই কাজ যতোটা সম্ভব ছিল, আজ তা সে তুলনায় অনেকটাই বেশি সম্ভব।’

পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক করে প্রবন্ধে বলা হয়, ‘পারমাণবিক বোমা নেই তো কী হয়েছে? কয়েক হাজার টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক তো রয়েছে। পারমাণবিক বোমা তৈরি করে নেয়াও কঠিন কিছু নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রে আইএস’র আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের অতীত সব আক্রমণের ঘটনাকে রীতিমতো পরিহাস করার মতো বড় পরিসরে ঘটবে এবং তা হবে ভয়ানক- এমনটাও দাবি করা হয় ওই প্রবন্ধে।

প্রবন্ধে বলা হয়- ‘মনে রেখো, আজ যা কিছু ঘটছে, এগুলোর শুরু হয়েছিল মাত্র এক বছর আগে। এক বছরেরও কম সময়ে যখন এতো কিছু ঘটে যেতে পারে, তাহলে এখনকার উন্নত যোগাযোগ ও যোগান ব্যবস্থার মধ্যে আজ থেকে এক বছর পর এই ঘটনাগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে?’

ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, আইএস’র এই মুহূর্তের সক্ষমতা সংগঠনটির পারমাণবিক ক্ষমতাধর হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু সংগঠনটির পেছনে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত বিশাল ও শক্তিশালী।

কিন্তু এরই মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তেলের খনিও দখলে নিয়ে নিয়েছে আইএস জঙ্গিরা। আক্রমণ চালানোর সময় লক্ষ-কোটি ডলারের শিল্প নিদর্শনও লুটপাট করে নিয়েছে তারা, যেগুলোর মধ্যে এমন অনেক শিল্প নিদর্শন আছে যার একেকটির মূল্যই ছয় অংকে লিখতে হয়। এছাড়াও যেসব এলাকা দখল করে নিয়েছে তারা, সেসব এলাকায় মানুষের আয়কর গ্রহণসহ অন্যান্য নানা উপায়ে অর্থ হাতাচ্ছে সংগঠনটি।

ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস’র দখলকৃত অঞ্চলে সংগঠনটির সম্পদ প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার মূল্যের বলে হিসাব করা হলেও তাদের সামগ্রিক অর্থ কোষাগার কতটা গভীর, তা এখনো অননুমেয়।

সংগঠনটির নেতা আবু বকর আল-বাগদাদী সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে বিশ্বের আরো কিছু অঞ্চলের দিকে হাত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনটি ‘বিশ্বের প্রথম সত্যিকার অর্থে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হয়ে উঠতে পারে।