নির্বাচনের মধ্যেই নিয়োগ, পদোন্নতি, উন্নয়নকাজ!

13

সিটি নির্বাচন ২০১৫নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নিয়োগ, পদোন্নতি, দোকান বরাদ্দসহ উন্নয়নমূলক সব কাজ চলছে।

নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর করপোরেশন এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প অনুমোদন এবং আগে অনুমোদিত প্রকল্পে টাকা ছাড় করা যাবে না।

তবে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ২০১১ সাল থেকে করপোরেশনে কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকায় সব কাজ এত দিন যেভাবে চলেছে, এখনো সেভাবেই চলছে। এ ব্যাপারে তারা নির্বাচন কমিশন বা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি।

তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, করপোরেশন ঠিক কাজ করছে না। এটা কোনো রীতির মধ্যে পড়ে না। বিষয়টি স্বাভাবিকও নয়। যেখানে কয়েক দিন পরই মেয়র ও কাউন্সিলররা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, সেখানে এখন এসব নিয়োগের কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর এখন পদোন্নতি দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

এর আগে গাজীপুরেও এমনটা হয়েছিল এবং পরে তা নিয়ে খুব জটিলতা হয়—এ তথ্য জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা। এসব করে মূলত নির্বাচিত মেয়রের জন্য বিপদ তৈরি করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। তাই বর্তমান করপোরেশনের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জনপ্রতিনিধিরা যদি করপোরেশনের কাজে সম্পৃক্ত থাকতেন, তাহলে অন্য বিষয় ছিল।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শওকত মোস্তফা বলেন, ‘আমরা রুটিন কাজ করছি। নিয়োগ, পদোন্নতি ও সমন্বয় কমিটির সভা সবকিছুই রুটিন কাজ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। সেখানে প্যানেল মেয়র রয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এখনো লিখিত কোনো অনুশাসন পাইনি। তবে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা চেয়েছি।’

দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তৃতীয় শ্রেণির ১০৯টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ নিয়ে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অসীম উদদীন সিটি করপোরেশন ও নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, মাত্র কিছুদিন আগে দুই সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। এর মধ্যে জনবল নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষা এবং পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বাছাই কমিটির সভা হয়েছে। এর আগে সচিব ও নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখন তাদের মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তোড়জোড় চলছে।

এ ছাড়া গত ২৭ মার্চ পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক, হিসাব সহকারী এবং কেয়ারটেকার পদে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এসব পরীক্ষায় অনেক অযোগ্য লোককেও পাস করানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের যেকোনো নিয়োগ ও পদোন্নতির কার্যক্রম অনাকাঙ্ক্ষিত, অবৈধ।

এ চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে অসীম উদদীন বলেন, ‘উন্নয়নমূলক কাজের দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। অথচ তহবিলে কোনো টাকা নেই। মেয়র বা কাউন্সিলররা এসে বিপদে পড়বে ভেবেই আমি এই চিঠি দিয়েছি।’

অসীম উদদীনের চিঠির পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সব নিয়োগ পরীক্ষা ‘অনিবার্য কারণে স্থগিত’ জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। কিন্তু ওই নিয়োগপ্রক্রিয়া এখন আবার শুরু হয়েছে।

৫ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনছার আলী খান স্থানীয় সরকার সচিবকে একটি চিঠি দেন। তাতে বলা হয়, সিটি করপোরেশন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন বিভাগ, শাখা ও অঞ্চল জনবল শূন্য থাকায় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে জানানো হয়, ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করার শর্তে উল্লেখিত শূন্য পদে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ৩ এপ্রিল জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা হয়েছে। চিঠিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে নিয়োগপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো বিধিনিষেধ আছে কিনা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৫ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়। তাতে এ নিয়োগের বিষয়ে অনাপত্তি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল মালেক বলেন, ‘নিয়োগে কোনো অসুবিধা নেই। এ নিয়োগপ্রক্রিয়া আরও এক বছর আগে করা উচিত ছিল। তবু আমরা নির্বাচন কমিশনের মতামত চেয়েছি। পরে নির্বাচন কমিশন যেন না বলে আমরা অনুমতি নিইনি। আমরা কমিশনে চিঠি দিয়েছি। আশা করি, রোববার জবাব পেয়ে যাব।’

নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। আমাদের এখন বিষয়গুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে।’

উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সেখানে চালক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। চলছে অন্যান্য উন্নয়নকাজও।

জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক রাখাল বর্মণ বলেন, ‘আমরা রুটিনকাজ করছি। নির্বাচন কমিশন বা স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।’

করপোরেশন একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৭০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। নীলক্ষেতে দোকান বরাদ্দ নিয়ে মামলা দুদকে মামলা চললেও সেখানে চারতলা মার্কেট হচ্ছে।

একইভাবে তফসিল ঘোষণার পরে হাতিরপুল কাঁচাবাজারের পাশে বহুতলা মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের মধ্যে ১০০ দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফুলবাড়িয়া জুতার মার্কেটও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব বরাদ্দ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগও আছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শওকত মোস্তফা বলেন, একটি চক্র এ গুজব ছড়াচ্ছে। সব মিথ্যা। প্রথম আলো