যুবরাজের দাম ২৫ কোটি

66

নয়াদিল্লি:
file
কালো চোখ আর কোকড়ানো শিং বিশিষ্ট সুদর্শন মহিষটির নাম যুবরাজ। ১০ ফুট লম্বা ও ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার মহিষটির ওজন ৪৫০ কেজি।
উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ৪৭ বছর বয়সি করমবীর সিং বিশাল দেহী এই মহিষটির মালিক।

গর্বের সাথেই তিনি বলেন, প্রতিদিন কেউ না কেউ তাকে দেখতে আসে। সে শুধুমাত্র একটা মহিষ নয়। সে এখন একটা ব্র্যান্ড বা মার্কা।

কঠোর পরিশ্রমী কৃষক করমবীর সিংসের প্রায় দুই ডজন গরু ও মহিষ রয়েছে। এরসাথে একটা ব্যবসা চালান এবং নিজ সম্পত্তি দেখাশুনা করেন।

স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে, অর্ধডজন গাড়ি ও ট্রাক্টর এবং বেশ কয়েকজন কাজের লোক নিয়ে হরিয়ানা রাজ্যের কুরুক্ষেত্র জেলার সুনারিও গ্রামে তার সুখের সংসার। তার এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় এমবিএ এবং আরেকজন রাজস্থানে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ছেন।

কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট তারকা যুবরাজের নামে যার নাম সেই সুদর্শন মহিষটিই তার সবচেয়ে বড় সম্পদ। মুরাহ জাতের এই ষাড়টি ভারতের ১৩ টি স্বীকৃত প্রজনন ষাড়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

ভারতের কেন্দ্রীয় গরু ও মহিষ প্রজনন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ইন্দারজিৎ সিং যুবরাজকে ‘চ্যাম্পিয়ন প্রজনন ষাড়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

কেননা যুবরাজের শুক্রাণুই সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে দামি শুক্রাণু।

ভারতে যেখানে এক ডোজ শূক্রাণুর মূল্য বড় জোর ৪৩০ টাকা। সেখানে যুবরাজের শুক্রাণুর দাম তার দশ গুণ অর্থাৎ ৪৩০০ টাকা।

সারা ভারত থেকে শুক্রাণু ব্যবসায়ীরা করমবীর সিংয়ের বাড়িতে শুক্রাণু কিনতে ভিড় জমায়।

যুবরাজের শুক্রাণু বিক্রি করেই প্রতি বছর আয় হয় অর্ধকোটি টাকা।

রাজ্যের আয়োজিত ষাড়ের লড়াইয়ে জিতেও যুবরাজ প্রতিবছর আয় করে গড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া যুবরাজ অনেক ট্রফিও জিতেছে।

আর তাই অনেক লোকই এই বিস্ময়কর প্রাণীটিকে কিনতে চায়। দুই বছর আগে হায়দারাবাদের এক ব্যবসায়ী সিংকে যুবরাজের বিনিময়ে ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করলেও রাজি হননি তিনি।

সিং বলেন, এর তিন গুণ টাকার প্রস্তাব পেলে তাকে শুধু তখনই আমি বিবেচনা করে দেখব যুবরাজকে বেচব কিনা। আমি ওটা দিয়ে একটা হেলিকপ্টার কিনতে চাই।

তারপর একটু চিন্তা করেই তিনি আবার বলেন, তাকে কি তার পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করা কি আমার ঠিক হবে? তাকে ছাড়া আমি কি বাঁচতে পারব?

সিংয়ের বাড়ির পেছন দিকেই থাকে যুবরাজের পরিবার। সেখানে রয়েছে ১৯ বছর বয়সি তার মা গঙ্গা যে এখন গর্ভবতী এবং ১৬তম বাচ্চা জন্ম দিতে যাচ্ছে।

সিং গর্বের সাথে জানান, গঙ্গা এখনো প্রতিদিন ২৬ লিটার করে দুধ দেয়। এছাড়া রয়েছে ৩ বছর বয়সি ভাই ভিম ও ১৬ মাস বয়সি বোন স্বরস্বতী।

সিং জানান, এ সবের শুরু হয়েছিল আজ থেকে ১৪ বছর আগে যখন যুবরাজের বাবাকে রোহতাক জেলার এক কৃষকের নিকট থেকে কিনে আনা হয়। যুবরাজের বাবাও ছিল এক বড় আকারের ষাড়। তাকে কেনা হয়েছিল ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে। তারপর বাকিটা ইতিহাস।

করমবীর সিংয়ের আদর যত্নেই যুবরাজকে একটি বিজয়ী ষাড়ে পরিণত হতে সাহায্য করেছে।

যুবরাজের দুই বেলার খাবারের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ও টনিক সমৃদ্ধ ২০ লিটার দুধ, ১০ কেজি আপেল এবং সমপরিমাণের খাদ্যশস্য। হিসেব করলে এর মূল্য দাঁড়ায় দৈনিক ২৫০০ টাকা।

এছাড়া প্রতি সন্ধায় দুজন কারে লোক যুবরাজকে হালকা ব্যায়ামের জন্য খামারে ৫ কিমি হাঁটিয়ে নিয়ে আসে।

সূত্র: বিবিসি