রাখাইনে গুম হচ্ছেন রোহিঙ্গা সাংবাদিকরা

84

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের খবর যাতে বাইরে যেতে না পারে সেজন্য রোহিঙ্গা সাংবাদিকদেরকে গুম করা হচ্ছে। দেশটির সেনাবাহিনী এরই মধ্যে বহু সাংবাদিককে গুম করেছে। তারা সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র গোপনে ধারণ করতেন তরুণ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবী সাংবাদিকরা। পরে স্মার্টফোনের মাধ্যমে এসব অডিও-ভিডিও ও স্থির ছবি দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হতো। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, তথ্য সরবরাহের এই নেটওয়ার্ককে ধ্বংস করার জন্য সেনাবাহিনী এসব প্রতিবেদকদের অনেককে অপহরণ ও হত্যা করেছে। অবরুদ্ধ রাখাইন রাজ্যে কি ঘটছে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ এখন তাই অনেক কমে গেছে। দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য স্টেটলেসের সম্পাদক রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ রফিক জানান, গত বছর রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযান শুরুর পর রাখাইনের ৯৫ শতাংশেরও বেশি সাংবাদিক ও প্রতিবেদক নিখোঁজ হয়েছে। এসব সাংবাদিক খবর সংগ্রহের জন্য তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, ‘বার্মার সেনাবাহিনী ও রাখাইনের সন্ত্রাসীরা এখনও রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ধর্ষণ, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। তবে সেখানে রোহিঙ্গা মোবাইল প্রতিবেদকদের যে নেটওয়ার্ক ছিল তা এখন আর কাজ করছে না। বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পরিবেশনের জন্য সহিংসতার যে বিস্তারিত খবরগুলো আসা প্রয়োজন, তা আর আমাদের কাছে আসছে না।’ রফিক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরাও রোহিঙ্গা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহিংসতা সংশ্লিষ্ট খবরগুলো পেতেন। তারা এবং আমাদের সংবাদ মাধ্যগুলোও এখন রাখাইনের খবর খুব কম পাচ্ছে।’

বাংলাদেশভিত্তিক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মুখপাত্র কো কো লিন জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে দুই হাজার মোবাইল প্রতিবেদক রাখাইনে সক্রিয় ছিল। তিনি বলেন, ‘গত বছর রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় মোবাইল প্রতিবেদকরা গ্রামগুলোতে সহিংসতার বিস্তারিত সংবাদ সংগ্রহ করত। নিরাপত্তা অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা যে সহিংসতা চালাত, তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী তা জানতে পেরেছে।’ মোবাইল প্রতিবেদকরা কিভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতেন তার বিবরণ দিয়েছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নুর হোসেন নামে এক মোবাইল প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী যখন আমাদের গ্রামে প্রবেশ করত তখন আমরা লুকিয়ে পড়তাম। তারা যখন অভিযান শেষ করে ফিরে যেত তখন আমরা বের হয়ে ঘটনাস্থলের ছবি, নির্যাতনের চিত্র ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতাম এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো বাইরে পাঠিয়ে দিতাম।’